যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড—কঠিন না সম্ভব? শীর্ষ ৫টি ভুল ধারণা ভাঙুন

অনেকে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পাওয়া খুব কঠিন, কিন্তু এই লেখায় আমরা শীর্ষ ৫টি প্রচলিত ভুল ধারণা ভেঙে দেখাবো যে বিষয়টি আসলে কতটা সম্ভব ও বাস্তব।

By Edex Editorial Team

অনেকেই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পাওয়া কঠিন, সময়সাপেক্ষ কিংবা শুধু উচ্চশিক্ষা বা আত্মীয়দের মাধ্যমেই সম্ভব। এই পোস্টে আমরা এমন ৫টি প্রচলিত ভুল ধারণা তুলে ধরেছি, যেগুলো অনেককে বিভ্রান্ত করে এবং সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা আবেদন করতে সাহস পান না। বাস্তবে কী সত্য আর কী মিথ—সব কিছু পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যাতে আপনি নিজেই মূল্যায়ন করতে পারেন আপনার সম্ভাবনা।

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড—কঠিন না সম্ভব? শীর্ষ ৫টি ভুল ধারণা ভেঙে দেখুন সত্য

গ্রিন কার্ড—অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের বৈধ অনুমতি—বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের স্বপ্ন। এই কার্ডটি শুধু আপনার স্থায়ী বাসস্থানই নিশ্চিত করে না, বরং চাকরি, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, ভ্রমণ ও নাগরিকত্বের পথকেও করে উন্মুক্ত।

তবে অনেকেই মনে করেন, “আমার গ্রিন কার্ড পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই”, “এইটা শুধু আত্মীয়দের জন্য”, বা “আমি শিক্ষিত না, তাই কোনো সম্ভাবনাও নেই।” বাস্তবতা হলো—এইসব বিশ্বাসের বেশিরভাগই ভুল ধারণা বা আধাআধি তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত ৫টি ভুল ধারণা এবং সত্যিকারের বাস্তবতা, যেন আপনি নিজেই বুঝে নিতে পারেন আপনার সম্ভাবনা কতটা বাস্তব।

ভুল ধারণা ১: “গ্রিন কার্ড শুধু আত্মীয় থাকলেই পাওয়া যায়”

বাস্তবতা:
যদিও Family Sponsorship অন্যতম জনপ্রিয় ও দ্রুত পদ্ধতি, এটি গ্রিন কার্ড পাওয়ার একমাত্র পথ নয়। Employment-Based Green Card, Investment Route (EB-5), Diversity Visa Lottery, Special Humanitarian Programs, এমনকি কিছু ধর্মীয় ও গবেষণা ভিসাও স্থায়ী বসবাসের পথে রূপ নিতে পারে।

বিকল্প পথগুলো:

  • EB-3: Skill-based Sponsorship (যেমন: নার্স, নির্মাণকর্মী, রেস্টুরেন্ট স্টাফ)

  • EB-2 NIW: জাতীয় স্বার্থে কাজ করা পেশাজীবীদের জন্য

  • DV Lottery (যদিও বাংলাদেশ বর্তমানে অযোগ্য, অন্য দেশের জন্মসূত্রে আবেদন করা যায়)

  • Asylum বা Refugee Status

অতএব, আত্মীয় না থাকলেও, আপনি কাজ, দক্ষতা, বিনিয়োগ বা মানবিক কারণে গ্রিন কার্ডের উপযুক্ত প্রার্থী হতে পারেন।

ভুল ধারণা ২: “শুধু উচ্চশিক্ষিত লোকদের জন্য গ্রিন কার্ড”

বাস্তবতা:
আপনার যদি HSC পাশ বা সামান্য স্কিল থাকে, তাহলেও আপনার জন্য রয়েছে EB-3 Work Visa Sponsorship–এর সুযোগ। হাজার হাজার রেস্টুরেন্ট, হোটেল, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ এবং অর্ধদক্ষ কর্মীদের প্রয়োজনের কারণে বিদেশি কর্মী স্পনসর করে থাকে।

বিশেষ সুযোগ:

  • Nursing Sector: বাংলাদেশের নার্সদের জন্য সরাসরি EB-3 Sponsorship পাওয়া যাচ্ছে

  • Hospitality Jobs: হোটেল/রেস্টুরেন্টে কাজের জন্য নিয়োগদাতা দ্বারা স্পনসরশিপ

  • Construction/Skilled Labor: যেকোনো দক্ষ কারিগরি পেশায় অভিজ্ঞতা থাকলে যোগ্য হতে পারেন

অতএব, ডিগ্রি না থাকলেও অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকলে গ্রিন কার্ড পাওয়া সম্ভব।

ভুল ধারণা ৩: “Diversity Visa Lottery ছাড়া আর কোনো সহজ উপায় নেই”

বাস্তবতা:
DV Lottery অনেকের কাছে সবচেয়ে আলোচিত পথ হলেও, এটি একমাত্র সহজ উপায় নয়। বাস্তবতায়, অনেক সময় Employment Sponsorship বা Marriage-Based Route আরও দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য হতে পারে, কারণ DV Lottery শত শত আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজনকে সুযোগ দেয়।

বিকল্প সহজ উপায়:

  • Marriage to a US Citizen: যেকোনো দেশের নাগরিককে বিবাহ করে গ্রিন কার্ড পাওয়া যায় (যদিও এটি যথেষ্ট যাচাইয়ের মাধ্যমে হয়)

  • Special Category Jobs: যেমন STEM Research, Medical Sector, বা Government-Approved Investors

  • Asylum/Refugee Route: নির্যাতনের শিকার হলে আবেদন করতে পারেন

অতএব, সহজ মানেই লটারি নয়—আপনার প্রোফাইল অনুযায়ী উপযুক্ত পথ বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

ভুল ধারণা ৪: “গ্রিন কার্ড পেতে অনেক বছর লেগে যায়”

বাস্তবতা:
সময় আসলে নির্ভর করে আপনি কোন ক্যাটাগরিতে আবেদন করছেন তার উপর। কিছু ক্ষেত্রে এটি সত্যি, যেমন siblings-এর মাধ্যমে sponsorship করলে ১০ বছরও লাগতে পারে। কিন্তু Marriage-Based, Employment-Based বা Special Green Card Programs-এর ক্ষেত্রে এই সময় অনেক কম।

দ্রুত প্রসেসিং সময়:

  • Marriage-Based Green Card: ১০–১৮ মাস

  • EB-2 NIW: ১২–১৬ মাস

  • EB-3 (With Premium Processing): ৬–১২ মাস

  • Asylum → GC: ১ বছর পর আবেদন, ৬–১২ মাসে অনুমোদন

আপনি যদি প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে শুরু করেন এবং ডকুমেন্টেশন ঠিকঠাক থাকে, তাহলে সময় অনেকাংশে কমে আসে।

ভুল ধারণা ৫: “গ্রিন কার্ড পেতে অনেক টাকা লাগে”

বাস্তবতা:
EB-5 Investor Visa–এর মতো কিছু ক্যাটাগরিতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হলেও, বেশিরভাগ গ্রিন কার্ড আবেদনেই খরচ তুলনামূলকভাবে কম। Family-Based অথবা Employment-Based আবেদন প্রক্রিয়ায় মাত্র কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার ডলারের মধ্যে ফি সম্পন্ন হয়।

খরচের আনুমানিক হিসাব:

  • Family Sponsorship: $1760–$2000 (বিশ্বব্যাপী প্রক্রিয়াসহ)

  • Employment Sponsorship: $2000–$4000 (নিয়োগদাতা অনেক সময় বহন করে)

  • DV Lottery: আবেদন ফি নেই, কনস্যুলার প্রক্রিয়ায় কিছু খরচ হয়

  • Asylum: বিনামূল্যে

সঠিক পরিকল্পনা থাকলে এটি আর্থিকভাবে অনেকটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

অতিরিক্ত পরামর্শ

  1. ডকুমেন্টেশন ঠিক করুন: জন্ম সনদ, শিক্ষাগত কাগজপত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, পাসপোর্ট সব আপডেট রাখুন।

  2. ইংরেজি দক্ষতা: IELTS/TOEFL বাধ্যতামূলক না হলেও, কাজে ও সাক্ষাৎকারে সহায়ক।

  3. আন্তর্জাতিক জব পোর্টাল ব্যবহার করুন: Indeed, Glassdoor, এবং LinkedIn–এ নিয়োগদাতার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।

  4. ভুয়া এজেন্ট থেকে সতর্ক থাকুন: ভিসা বা গ্রিন কার্ড “গ্যারান্টি” দাবি করে কেউ টাকা চাইলে তা বিশ্বাস করবেন না।

উপসংহার

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পাওয়ার স্বপ্ন অনেক বড় মনে হলেও, তা একেবারে অসম্ভব নয়—বরং অনেকটাই সম্ভব, যদি আপনি সঠিক পথটি খুঁজে নিতে পারেন। ভুল ধারণা ও অজ্ঞতার কারণে অনেকেই নিজেদের প্রোফাইলকে মূল্যায়নই করেন না। অথচ যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, বা সম্পর্কের ভিত্তিতে আপনিও গ্রিন কার্ড পাওয়ার উপযুক্ত হতে পারেন।

তাই আর দেরি নয়—নিজের সুযোগ সম্পর্কে জানুন, পরিকল্পনা করুন, এবং সাহস নিয়ে যাত্রা শুরু করুন! যুক্তরাষ্ট্রের দরজা হয়তো আপনার জন্যই খোলা রয়েছে। 🇺🇸

Facebook
X (Twitter)
YouTube
LinkedIn
Instagram