গ্রিন কার্ডের যোগ্য নন মনে হচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রে আপনার সুযোগ এখনও আছে!

আপনার যদি মনে হয় আপনি গ্রিন কার্ডের জন্য যোগ্য নন, তাহলে জেনে রাখুন—যুক্তরাষ্ট্রে এখনও আপনার জন্য সুযোগ রয়েছে।

By Edex Editorial Team

অনেকে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পাওয়া শুধুমাত্র বিশেষ যোগ্যতা বা উচ্চশিক্ষার অধিকারীদের জন্যই সম্ভব। তবে বাস্তবে এমন অনেক বিকল্প পথ রয়েছে—যেমন পারিবারিক স্পনসরশিপ, কর্মসংস্থানভিত্তিক ভিসা, গ্রিন কার্ড লটারি (DV Lottery), আশ্রয় প্রার্থী প্রক্রিয়া ইত্যাদি—যেগুলোর মাধ্যমে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পান। এই পোস্টে আমরা দেখাবো কীভাবে আপনি নিজের প্রোফাইল অনুযায়ী উপযুক্ত পথ খুঁজে পেতে পারেন এবং আপনার গ্রিন কার্ডের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পারেন।

মনে করছেন আপনি গ্রিন কার্ডের জন্য যোগ্য নন? যুক্তরাষ্ট্রে আপনার সুযোগ এখনও রয়েছে!

গ্রিন কার্ড—অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি—অনেকের কাছেই মনে হতে পারে দূরের স্বপ্ন। বিশেষ করে যারা মনে করেন, “আমার উচ্চশিক্ষা নেই”, “আমার পরিবারে কেউ নেই যুক্তরাষ্ট্রে”, কিংবা “আমি কোনো বিশেষ দক্ষতার অধিকারী নই”—তাদের অনেকেই নিজেকে গ্রিন কার্ডের দৌড়ের বাইরে ভাবেন।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পাওয়ার অনেকগুলো পথ রয়েছে। কিছু পথ সহজ, কিছু জটিল—তবে সঠিক তথ্য ও প্রস্তুতির মাধ্যমে আপনি আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী সুযোগ পেতে পারেন।

এই গাইডে আমরা আলোচনা করবো:

  • যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পাওয়ার প্রধান ক্যাটাগরিগুলো

  • সাধারণ ভুল ধারণা

  • বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সুযোগ

  • প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও প্রস্তুতি

১. যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পাওয়ার প্রধান ক্যাটাগরিগুলো

‌A. পারিবারিক ভিত্তিক গ্রিন কার্ড (Family-Based Green Card)

এই ক্যাটাগরিটি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত পথ। যদি আপনার পরিবারের কেউ (spouse, parent, sibling) মার্কিন নাগরিক হন বা গ্রিন কার্ড হোল্ডার হন, তাহলে তারা আপনাকে স্পনসর করতে পারেন।

যে সম্পর্কগুলোতে গ্রিন কার্ডের আবেদন করা যায়:

  • মার্কিন নাগরিকের spouse বা fiancé(e)

  • মার্কিন নাগরিকের সন্তান/পিতা-মাতা/ভাই-বোন

  • গ্রিন কার্ড হোল্ডারের spouse ও অবিবাহিত সন্তান

প্রসেসিং টাইম:
১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে, সম্পর্ক ও কোটা অনুযায়ী।

‌B. কর্মসংস্থানভিত্তিক গ্রিন কার্ড (Employment-Based Green Card)

যদি আপনি কোনো কোম্পানির পক্ষ থেকে কাজের অফার পান, তাহলে তারা আপনাকে স্পনসর করে গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারে।

মূল ভিসা ক্যাটাগরি:

  • EB-1: উচ্চ দক্ষ পেশাজীবী বা গবেষক

  • EB-2: বিশেষ ডিগ্রিধারী বা অভিজ্ঞ পেশাজীবী (NIW সহ)

  • EB-3: সাধারণ স্কিলড ও আনস্কিলড ওয়ার্কারদের জন্য

বাংলাদেশিদের জন্য সম্ভাবনাময় খাত:

  • আইটি ও সফটওয়্যার

  • নার্সিং ও স্বাস্থ্যসেবা

  • রেস্টুরেন্ট/হোটেল সেক্টর (আংশিক)

  • নির্মাণ বা কারিগরি শ্রম

‌C. ডাইভারসিটি ভিসা লটারি (DV Lottery)

আমেরিকার সরকার প্রতিবছর প্রায় ৫০,০০০ মানুষকে লটারি ভিত্তিতে গ্রিন কার্ড দেয়। বাংলাদেশ বর্তমানে এই লটারির আওতায় নেই, তবে যাদের জন্ম অন্য যোগ্য দেশে (যেমন—ভারতীয় বাবা, বা জন্ম সৌদি আরবে), তারা আবেদন করতে পারেন।

প্রসেস:

  • অনলাইন E-DV ফর্ম পূরণ (বিনামূল্যে)

  • ছবি ও বেসিক তথ্য জমা

  • লটারি রেজাল্ট ঘোষণার পর ভিসা ইন্টারভিউ

‌D. আশ্রয় প্রার্থী (Asylum) বা শরণার্থী স্ট্যাটাস

যদি আপনি নিজ দেশ থেকে নির্যাতন বা নিপীড়নের শিকার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, এবং তা প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে Asylum বা Refugee স্ট্যাটাসের জন্য আবেদন করতে পারেন।

শর্ত:

  • নির্যাতনের প্রমাণ থাকা

  • নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করা

  • যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে থাকাকালীন আবেদন জমা

এক বছর পর: আপনি গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

‌E. ইনভেস্টর গ্রিন কার্ড (EB-5)

যারা যুক্তরাষ্ট্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে চান এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান, তারা EB-5 ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারেন।

যোগ্যতা:

  • কমপক্ষে $৮০০,০০০ বিনিয়োগ

  • ১০ জন পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টি

২. সাধারণ ভুল ধারণাগুলো

“আমার উচ্চশিক্ষা নেই, তাই গ্রিন কার্ড পাওয়ার সুযোগও নেই।”

→ ভুল। EB-3 ক্যাটাগরির অধীনে অনেক স্কিলড ও আনস্কিলড পেশার জন্য স্পনসর পাওয়া যায়।

“আমার যুক্তরাষ্ট্রে কোনো আত্মীয় নেই।”

→ Employment-Based বা Investment route নিতে পারেন।

“লটারি ছাড়া আর কোনো সহজ উপায় নেই।”

→ Green List Jobs বা Direct Hiring এর মাধ্যমে কাজ পেলে সরাসরি গ্রিন কার্ড আবেদন সম্ভব।

৩. বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সম্ভাব্য সুযোগ

বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সরাসরি DV Lottery সুবিধা না থাকলেও অন্যান্য পথ এখনো উন্মুক্ত:

  • Nursing/Health Sector: বাংলাদেশি নার্সদের জন্য মার্কিন ক্লিনিক বা হাসপাতাল থেকে EB-3 sponsorship পাওয়া যাচ্ছে।

  • Tech Sector: H1B ভিসা ও EB-2/EB-3 sponsorship পাওয়া যায় বিভিন্ন আইটি কোম্পানির মাধ্যমে।

  • Restaurant/Skilled Jobs: কিছু ক্ষেত্রে হোটেল/রেস্টুরেন্ট বা কনস্ট্রাকশন ফার্মের মাধ্যমে স্পনসর পাওয়া সম্ভব।

৪. প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতি

১. নিজের প্রোফাইল যাচাই করুন:
শিক্ষা, কাজের অভিজ্ঞতা, ইংরেজি দক্ষতা, আত্মীয় সম্পর্ক—সবকিছু বিশ্লেষণ করে আপনি কোন ক্যাটাগরিতে পড়েন তা নির্ধারণ করুন।

২. ডকুমেন্টেশন তৈরি রাখুন:

  • পাসপোর্ট

  • একাডেমিক সার্টিফিকেট

  • কাজের রেফারেন্স

  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স

  • মেডিকেল রিপোর্ট

  • ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ (যদি প্রয়োজন হয়)

৩. সম্ভাব্য নিয়োগদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করুন:
অনলাইন জব পোর্টাল (Indeed, Glassdoor, LinkedIn) বা অভিজ্ঞ কনসালট্যান্টের সাহায্য নিতে পারেন।

৫. সঠিক পরামর্শ ও সতর্কতা

  • অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলে দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা বা স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

  • ভুয়া এজেন্ট বা নকল স্পনসর থেকে দূরে থাকুন।

  • সবসময় মার্কিন সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (uscis.gov, travel.state.gov) থেকে তথ্য যাচাই করুন।

উপসংহার

গ্রিন কার্ড পাওয়ার জন্য যোগ্যতা থাক বা না থাক—এমন চিন্তা না করে সঠিক তথ্য জেনে, নিজের প্রোফাইল অনুযায়ী উপযুক্ত পথ নির্বাচন করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় আপনি নিজেরই অজান্তে এমন একটি ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে যান, যেটি আপনাকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী নাগরিক হওয়ার পথ করে দিতে পারে।

তাই, “আমি যোগ্য নই”—এই ভুল ধারণা সরিয়ে ফেলুন। গ্রিন কার্ডের দরজা এখনও আপনার জন্য খোলা রয়েছে, আপনি শুধু সেই দরজায় কড়া নাড়েননি। এখনই প্রস্তুতি শুরু করুন! 🇺🇸

Facebook
X (Twitter)
YouTube
LinkedIn
Instagram