F1 ভিসা থেকে গ্রিন কার্ড: যুক্তরাষ্ট্রে স্টাডি-টু-পিআর প্রক্রিয়ার সহজ ব্যাখ্যা
যুক্তরাষ্ট্রে F1 স্টুডেন্ট ভিসা থেকে গ্রিন কার্ডে রূপান্তরের পূর্ণ প্রক্রিয়াটি এখানে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
By Edex Editorial Team
- June 17, 2025
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য জনপ্রিয় ভিসা হলো F1, কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে সেখান থেকে স্থায়ী বসবাস বা গ্রিন কার্ড অর্জনের। এই পোস্টে আমরা ব্যাখ্যা করেছি কীভাবে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী F1 ভিসা থেকে H-1B ও পরে গ্রিন কার্ডে রূপান্তর করতে পারে। শিক্ষাজীবনের পরে চাকরি, স্পনসরশিপ, OPT, STEM Extension ও বিভিন্ন ইমিগ্রেশন পাথওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যাতে আপনি নিজের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রে F1 থেকে গ্রিন কার্ড: স্টাডি-টু-পিআর পূর্ণ গাইড
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। কিন্তু অনেকেই শুধু ডিগ্রি অর্জন নয়, বরং স্থায়ী বসবাসের (PR) সুযোগও পেতে চান। এই পথে সবচেয়ে সাধারণ শুরু হলো F1 স্টুডেন্ট ভিসা, যেখান থেকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে গ্রিন কার্ড পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব।
এই লেখায় আমরা আলোচনা করব কীভাবে F1 ভিসা থেকে আপনি ধাপে ধাপে গ্রিন কার্ড বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন, এর জন্য কী যোগ্যতা লাগবে, কোন ধাপগুলো গুরুত্বপূর্ণ, এবং কীভাবে আপনি নিজেকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে পারেন।
ধাপ ১: F1 স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আগমন
F1 ভিসা হচ্ছে নন-ইমিগ্রান্ট স্টুডেন্ট ভিসা যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফুলটাইম অধ্যয়নের অনুমতি দেয়। এই ভিসা আপনাকে শুধুমাত্র পড়াশোনার উদ্দেশ্যে দেশটিতে অবস্থানের সুযোগ দেয় এবং স্থায়ী বসবাসের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না—তবে এটি PR যাত্রার প্রথম ধাপ হতে পারে।
ধাপ ২: Optional Practical Training (OPT)
পড়াশোনা শেষ করার পর আপনি OPT (Optional Practical Training)-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। OPT হলো এক ধরনের ওয়ার্ক পারমিট যা আপনাকে ১২ মাস (STEM বিষয়ের ক্ষেত্রে ২৪ মাস পর্যন্ত এক্সটেনশনসহ) যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি দেয়।
এই সময়ের মধ্যেই আপনাকে এমন একটি চাকরি খুঁজতে হবে, যেখানে নিয়োগদাতা আপনার জন্য H-1B স্পনসরশিপ দিতে আগ্রহী হবে।
ধাপ ৩: H-1B ওয়ার্ক ভিসায় রূপান্তর
H-1B ভিসা হলো একটি অস্থায়ী কর্মসংস্থান ভিত্তিক ভিসা, যা আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি দেয়। এটি অনেকের জন্য F1 থেকে PR-এর পথে সবচেয়ে সাধারণ ও স্বীকৃত রুট।
যোগ্যতা:
ব্যাচেলর বা তার চেয়ে উচ্চতর ডিগ্রি থাকতে হবে
চাকরি আপনার পড়াশোনার বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে হবে
নিয়োগদাতা কোম্পানি আপনার জন্য H-1B স্পনসর করবে
H-1B ভিসা সাধারণত ৩ বছরের জন্য ইস্যু করা হয় এবং একবার এক্সটেনশনের মাধ্যমে ৬ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়। এই সময়ে আপনি গ্রিন কার্ডের আবেদন শুরু করতে পারবেন।
ধাপ ৪: PERM এবং I-140 ফাইল করা
H-1B অবস্থায় থাকাকালীন, আপনার নিয়োগকর্তা যদি স্থায়ীভাবে আপনাকে রাখতে চান, তাহলে তারা PERM Labor Certification এর মাধ্যমে একটি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। এটি মার্কিন শ্রম বিভাগকে জানায় যে তারা মার্কিন কোনো নাগরিক না পেয়ে আপনার মতো যোগ্য বিদেশি নাগরিককে নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছেন।
PERM অনুমোদনের পর তারা I-140 Immigrant Petition for Alien Worker ফাইল করবেন, যা আপনাকে স্থায়ী অভিবাসনের জন্য বিবেচনা করার পথে নিয়ে যায়।
ধাপ ৫: Adjustment of Status (Form I-485)
I-140 অনুমোদিত হলে, আপনি Form I-485 এর মাধ্যমে আপনার অভিবাসন স্ট্যাটাস পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবেন, যা আপনার গ্রিন কার্ডের জন্য সরাসরি আবেদন। যদি ভিসা ক্যাটাগরি ও কোটা উপলব্ধ থাকে, তাহলে আপনি একই সঙ্গে EAD (Employment Authorization Document) এবং Advance Parole (ভ্রমণ অনুমতি) এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এই ধাপে পৌঁছানোর পর আপনি ইতিমধ্যে স্থায়ী অভিবাসনের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন।
বিকল্প পাথওয়ে: Marriage-Based Green Card
অনেকে F1 বা H-1B অবস্থায় বৈধভাবে একজন মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে করে Marriage-Based Green Card এর জন্য আবেদন করেন। এই প্রক্রিয়াটিও একটি বৈধ এবং কার্যকর পদ্ধতি, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কের সত্যতা ও যৌক্তিকতার উপর নির্ভর করে।
বিকল্প পাথওয়ে: EB-5 ইনভেস্টর ভিসা
যদি আপনার আর্থিক সক্ষমতা থাকে, তাহলে আপনি EB-5 ইনভেস্টর ভিসা এর মাধ্যমে সরাসরি গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মার্কিন অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে হবে, যা সাধারণত $800,000 থেকে শুরু হয়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ
টাইমিং খুব গুরুত্বপূর্ণ: OPT সময়কাল শেষ হওয়ার আগেই H-1B প্রক্রিয়া শুরু করতে না পারলে আপনি দেশের বাইরে যেতে হতে পারে।
ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী কোটা রয়েছে, বিশেষ করে Employment-Based (EB-2, EB-3) গ্রিন কার্ড ক্যাটাগরিতে।
আইনি পরামর্শ: একটি অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নির সাহায্য নিলে ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
ডকুমেন্টেশন ও প্রমাণাদি: প্রতিটি ধাপে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরির বিবরণ, নিয়োগপত্র, ট্যাক্স রেকর্ডসহ সব তথ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি।
উপসংহার
F1 থেকে গ্রিন কার্ড পাওয়া সময়সাপেক্ষ, তবে সঠিক পরিকল্পনা, সময়ানুগ পদক্ষেপ ও আইনি সহায়তা থাকলে এটি একটি বাস্তবযোগ্য লক্ষ্য। প্রতিটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটি সিদ্ধান্ত আপনার ভবিষ্যতের অভিবাসন পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা করছেন, তাদের এই পুরো প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে জানা ও বোঝা প্রয়োজন।
এই গাইডটি আপনাকে সেই যাত্রার প্রাথমিক রূপরেখা দিয়েছে। বিস্তারিত সহায়তার জন্য পেশাদার পরামর্শ নিন এবং সময়মতো পদক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আপনার ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুন।