শিক্ষা → কাজ → দীর্ঘমেয়াদী আবাসন → ইতালির নাগরিকত্ব: সম্পূর্ণ পথচিত্র উন্মোচন

ইতালিতে পড়াশোনার পর কাজ, দীর্ঘমেয়াদী আবাসন ও নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এখন আপনার জন্য উন্মুক্ত।

By Edex Editorial Team

এই পোস্টে ইতালিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ থেকে শুরু করে কাজের সুযোগ, দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্স পারমিট (EU Long-Term Residence Permit) এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার পূর্ণ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কীভাবে এই ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে ইতালির স্থায়ী বাসিন্দা এবং পরে নাগরিক হতে পারেন, তা সহজ ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। এতে স্টুডেন্ট ভিসা, পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক অপশন, রেসিডেন্স পারমিটের সময়কাল, নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইতালিতে স্টাডি থেকে নাগরিকত্ব পর্যন্ত সম্পূর্ণ যাত্রাপথ – সহজ ভাষায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা

ইতালি শুধুমাত্র তার অপূর্ব স্থাপত্য, খাবার আর ইতিহাসের জন্য নয়—শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও স্থায়ী বসবাসের দিক থেকেও এটি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ইতালিতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ধাপে ধাপে স্থায়ী রেসিডেন্স (Long-Term Residence Permit) এবং পরে নাগরিকত্ব (Italian Citizenship) অর্জন করতে পারেন।

ধাপ ১: ইতালিতে উচ্চশিক্ষা (Study in Italy)

কেন ইতালি বেছে নেবেন?

  • ইউরোপজুড়ে স্বীকৃত ডিগ্রি

  • অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে কম

  • বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের সুযোগ (বিশেষ করে Regione scholarships)

  • ইংরেজি ভাষায় পড়ার কোর্স সহজলভ্য

স্টুডেন্ট ভিসার প্রক্রিয়া

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য D-type National Visa প্রযোজ্য। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পাওয়ার পর আপনি আবেদন করতে পারবেন ইতালিয়ান স্টুডেন্ট ভিসার জন্য। ভিসা পাওয়ার পর ইটালিতে পৌঁছানোর ৮ দিনের মধ্যে আপনাকে ‘Permesso di Soggiorno’ (Residence Permit) এর জন্য আবেদন করতে হবে।

ধাপ ২: পড়াশোনার পর কাজের সুযোগ (Post-Study Work Opportunity)

স্টাডি শেষে কি কাজ করা যায়?

হ্যাঁ, ইতালিতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে ১২ মাসের জন্য ‘Permesso di Soggiorno per Attesa Occupazione’ (Job Search Visa) পেতে পারেন। এই সময়ে তারা পূর্ণকালীন চাকরি খুঁজতে পারবেন।

চাকরি পেলে কী হবে?

আপনি যদি কোনো নিয়মিত চুক্তিভিত্তিক চাকরি (subordinate work) পেয়ে যান, তাহলে আপনি ‘Lavoro Subordinato’ বা ‘Lavoro Autonomo’ (Self-employed) রেসিডেন্স পারমিটে রূপান্তর করতে পারবেন। এতে আপনি বৈধভাবে ইতালিতে বসবাস ও কাজ করতে পারবেন।

ধাপ ৩: দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্স পারমিট (EU Long-Term Residence Permit)

কী এই পারমিট?

‘Permesso di Soggiorno UE per Soggiornanti di Lungo Periodo’ বা EU Long-Term Residence Permit এমন একটি পারমিট যা আপনাকে ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার দেয়। এটি অনেকটা PR-এর মতই।

কে যোগ্য?

এই পারমিটের জন্য আপনাকে নিচের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:

  • পরপর ৫ বছর বৈধভাবে ইতালিতে বসবাস

  • বৈধ আয় থাকা (চাকরি/ব্যবসা/ফ্রিল্যান্সিং ইত্যাদি)

  • ইতালিয়ান ভাষার A2 লেভেল দক্ষতা

  • অপরাধমুক্ত রেকর্ড

  • পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা

পারমিট পাওয়ার সুবিধা

  • ইতালিতে অস্থায়ী নয়, স্থায়ী বসবাস

  • সামাজিক সেবা ব্যবহারের অধিকার (স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা)

  • ইউরোপের অন্যান্য দেশের জন্যও সহজে ভিসা পাওয়া

  • নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার পথ সহজ হয়

ধাপ ৪: ইতালির নাগরিকত্ব (Italian Citizenship)

নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়

EU Long-Term Residence Permit পাওয়ার পর আপনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন যদি আপনি:

  • ১০ বছর ইতালিতে বৈধভাবে বসবাস করেন

  • ইতালির সংবিধান ও সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন

  • অপরাধমুক্ত থাকেন

  • যথাযথ আয় ও বাসস্থান প্রমাণ করতে পারেন

আবেদন প্রক্রিয়া

  • আবেদন অনলাইনে করা হয়

  • আপনাকে ন্যাশনালিটির জন্য ভাষা দক্ষতা, আয়, আবাসন প্রমাণ ও কাগজপত্র জমা দিতে হবে

  • অনুমোদন পেতে ২–৩ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে

নাগরিকত্বের সুবিধা

  • ইতালির পাসপোর্ট – বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী

  • ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সকল দেশে বসবাস ও কাজের অধিকার

  • সামাজিক সুরক্ষা, ভোটাধিকার, শিক্ষাগত ও স্বাস্থ্য সুবিধা

অতিরিক্ত টিপস:

  1. ইতালিয়ান ভাষা শেখা শুরু করুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এটি শুধু নাগরিকত্ব নয় বরং চাকরি ও সমাজে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

  2. প্রতি বছর আপনার রেসিডেন্স পারমিট রিনিউ করতে ভুলবেন না। বৈধতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

  3. আপনার আয় এবং আবাসনের কাগজপত্র সব সময় হালনাগাদ রাখুন। কারণ এগুলো প্রায় সব ধাপে দরকার হবে।

উপসংহার:

ইতালিতে পড়াশোনা শুরু করে আপনি ধাপে ধাপে দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্স এবং নাগরিকত্ব অর্জনের সুযোগ পেতে পারেন। সঠিক পরিকল্পনা, ধৈর্য ও আইনি দিকগুলো অনুসরণ করলে আপনি ইউরোপের কেন্দ্রে আপনার ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবেন। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি স্বপ্নের মতো পথ—যেটা বাস্তবে রূপ দিতে এখনই প্রস্তুতি নেয়া উচিত।

Facebook
X (Twitter)
YouTube
LinkedIn
Instagram