আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনার কথা ভাবছেন? জেনে নিন কীভাবে এটি স্থায়ী বসবাসের (PR) পথ খুলে দেয়।

আপনি কি আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা করার কথা ভাবছেন? জেনে নিন কীভাবে এটি আপনাকে স্থায়ী বসবাসের (PR) সুযোগ এনে দিতে পারে।

By Edex Editorial Team

আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা শুধু একটি আন্তর্জাতিক ডিগ্রি অর্জনের সুযোগই নয়, বরং স্থায়ী বসবাস (PR) পাওয়ার একটি সম্ভাব্য পথও বটে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা শেষ করার পর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ পান, যা তাদের অভিজ্ঞতা অর্জন ও চাকরি পাওয়ার দরজা খুলে দেয়। এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো কীভাবে আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করলে আপনি ধাপে ধাপে PR-এর পথে এগিয়ে যেতে পারেন—শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রক্রিয়া, গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলি ও বাস্তবিক সম্ভাবনাগুলো নিয়ে।

আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা থেকে PR: ধাপে ধাপে গাইড

আয়ারল্যান্ড শুধুমাত্র ইউরোপের একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী দেশ নয়, বরং এটি আজকের দিনে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, ইংরেজি ভাষায় পাঠদান, বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ—এই সব কিছুই আয়ারল্যান্ডকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

কিন্তু আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এর মাধ্যমে স্থায়ী বসবাসের (PR) সম্ভাবনা। তাহলে কীভাবে একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা করে স্থায়ী বসবাসের পথে এগোতে পারেন? আসুন ধাপে ধাপে জেনে নিই।

ধাপ ১: উপযুক্ত প্রোগ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেওয়া

আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করার সময় আপনাকে এমন কোর্স বেছে নিতে হবে যা সরকার অনুমোদিত এবং INIS Stamp 2 এর আওতাভুক্ত। সাধারণত এই তালিকায় বিভিন্ন Bachelor’s, Master’s এবং Postgraduate Diploma কোর্স থাকে। উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন কোর্স যেমন:

  • Information Technology

  • Data Analytics

  • Cybersecurity

  • Engineering (Mechanical, Civil, etc.)

  • Nursing & Healthcare

  • Business & Finance

এসব ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ তুলনামূলক বেশি থাকে, যা ভবিষ্যতে PR পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ধাপ ২: শিক্ষার্থী ভিসা (Stamp 2) পাওয়া

আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা করতে চাইলে প্রথমে স্টুডেন্ট ভিসার (Stamp 2) জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসা দিয়ে আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন (ছুটির সময় পূর্ণকালীন)। এই কাজের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে আপনার পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

ধাপ ৩: কোর্স শেষ করার পর কর্মসংস্থান অনুমতি (Stamp 1G)

আয়ারল্যান্ডে শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা শেষ করার পর আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১ বছরের Stamp 1G ভিসা পাবেন। এটি হলো “Third Level Graduate Scheme” যেটি আপনাকে আয়ারল্যান্ডে থেকে পূর্ণকালীন চাকরি খোঁজার এবং কাজ করার অনুমতি দেয়।

Masters বা Postgraduate Level শিক্ষার্থীরা সাধারণত ২৪ মাসের Stamp 1G পান, আর Bachelor’s Level শিক্ষার্থীরা পান ১২ মাসের জন্য।

ধাপ ৪: চাকরি পাওয়া ও কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন

Stamp 1G থাকার সময় আপনি যদি কোনো আয়ারল্যান্ড-ভিত্তিক নিয়োগকর্তার কাছ থেকে পূর্ণকালীন চাকরির অফার পান, তাহলে আপনি Stamp 1 অথবা Critical Skills Employment Permit এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।

কর্মসংস্থানের দুটি প্রধান রুট:

  1. Critical Skills Employment Permit:

    • দক্ষ কর্মীদের জন্য।

    • কমপক্ষে €32,000 বার্ষিক বেতনের চাকরি থাকতে হবে।

    • 2 বছরের জন্য ইস্যু হয়, এরপর PR-এর জন্য যোগ্যতা তৈরি হয়।

  2. General Employment Permit:

    • সাধারণ চাকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

    • কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকে।

    • 5 বছর কাজের পর PR এর জন্য আবেদন করা যায়।

ধাপ ৫: চাকরির অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে PR (Stamp 4) এর জন্য আবেদন

আপনি যদি ক্রিটিক্যাল স্কিলস ভিসার অধীনে ২ বছর কাজ করেন, তাহলে আপনি Stamp 4 অর্থাৎ আয়ারল্যান্ডে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করতে পারবেন। Stamp 4 আপনাকে:

  • চাকরির অনুমতি ছাড়াই কাজ করার অধিকার দেয়

  • আপনার পরিবারকে স্পনসর করার সুযোগ দেয়

  • দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের নিরাপত্তা দেয়

General Employment Permit থাকলে ৫ বছর কাজের অভিজ্ঞতার পর Stamp 4 এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।

অতিরিক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

পরিবারের জন্য স্পনসর:

আপনি যদি PR পান বা Stamp 4-তে চলে আসেন, তাহলে আপনার জীবনসঙ্গী এবং সন্তানদের আয়ারল্যান্ডে নিয়ে আসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

নাগরিকত্ব:

Stamp 4 নিয়ে ৫ বছর আয়ারল্যান্ডে বসবাস করলে আপনি Irish Citizenship এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন।

Post-study advantages:

  • আয়ারল্যান্ডের চাকরির বাজার EU দেশের জন্য উন্মুক্ত।

  • অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকলে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে কাজের সুযোগ থাকে।

কেন আয়ারল্যান্ডকে বেছে নেবেন?

  • বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা

  • ইংরেজি-ভাষাভিত্তিক দেশ হওয়ায় ভাষার বাধা কম

  • EU সদস্যভুক্ত দেশ, ফলে ইউরোপজুড়ে চাকরির সম্ভাবনা

  • পড়াশোনা শেষে বাস্তবসম্মত PR পথ

উপসংহার

আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত হতে পারে শুধু একাডেমিক সাফল্যের জন্য নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার গড়ে তোলার প্রথম ধাপ। সঠিক কোর্স, পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী সহজেই আয়ারল্যান্ডে স্থায়ী বসবাসের (PR) পথে এগিয়ে যেতে পারেন।

আপনার লক্ষ্য যদি ইউরোপে উচ্চশিক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিরাপদ জীবন হয়, তাহলে আয়ারল্যান্ড হতে পারে আপনার জন্য সেরা পছন্দ।

Facebook
X (Twitter)
YouTube
LinkedIn
Instagram