বয়স কি আপনার অস্ট্রেলিয়া পিআর পাওয়ার সম্ভাবনায় প্রভাব ফেলে? এখনই জানুন!

আপনার বয়স কি অস্ট্রেলিয়া পিআর পাওয়ার সম্ভাবনায় প্রভাব ফেলে? এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত জানব।

By Edex Editorial Team

অস্ট্রেলিয়ায় পিআর পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পোস্টে আমরা বয়সের উপর নির্ভর করে পয়েন্ট সিস্টেম কিভাবে কাজ করে, কোন বয়স গোষ্ঠী সবচেয়ে উপযুক্ত, এবং বয়স বাড়লেও কীভাবে আপনার সুযোগ বাড়ানো যায় তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছি। এছাড়াও বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য শর্ত এবং বয়স কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে জানানো হয়েছে। যারা অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি দরকারী গাইড।

অস্ট্রেলিয়ায় পিআর (স্থায়ী বাসস্থান) পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বয়সের ওপর নির্ভর করে কত পয়েন্ট আপনি পাবেন এবং তা আপনার পিআর প্রক্রিয়াকে কতটা সফল করতে পারে, তা অনেকটাই নির্ধারণ করে। এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত জানবো বয়স আপনার অস্ট্রেলিয়ান পিআর সুযোগকে কীভাবে প্রভাবিত করে, বয়স ভিত্তিক পয়েন্ট সিস্টেম কী, কোন বয়স গোষ্ঠী সবচেয়ে উপযুক্ত, এবং বয়স বাড়লেও কীভাবে আপনার পিআর পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানো যায়।

১. অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট সিস্টেমে বয়সের গুরুত্ব

অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট-ভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থা (Points-Based Immigration System) এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে আবেদনকারীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ওপর পয়েন্ট দেওয়া হয়। যেমন: বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, ইংরেজি দক্ষতা ইত্যাদি। এই পয়েন্টগুলোর যোগফল নির্ধারণ করে কে আবেদন করতে পারবে এবং কার পিআর আবেদন অনুমোদিত হতে পারে।

বয়সের ক্ষেত্রে, ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সের মধ্যে আবেদনকারীরা সর্বোচ্চ পয়েন্ট পান। ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সের আবেদনকারীদের পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই বয়স এখানে একটি সীমাবদ্ধতা হিসেবে কাজ করে।

২. বয়স ভিত্তিক পয়েন্ট কেমন হয়?

নিম্নে বয়স ভিত্তিক পয়েন্টের একটি সাধারণ ধারণা দেয়া হলো:

বয়স (বছর) পয়েন্ট
১৮-২৪ ২৫
২৫-৩২ ৩০
৩৩-৩৯ ২৫
৪০-৪৪ ১৫
৪৫ বা বেশি
  • ২৫-৩২ বছর বয়সের মধ্যে আবেদনকারীরা সবচেয়ে বেশি (৩০) পয়েন্ট পান।

  • ১৮-২৪ এবং ৩৩-৩৯ বছর বয়সের জন্য ২৫ পয়েন্ট দেওয়া হয়।

  • ৪০-৪৪ বছর বয়সের জন্য পয়েন্ট কমে ১৫।

  • ৪৫ বা তার বেশি বয়সের জন্য পয়েন্ট পাওয়া যায় না, তাই পিআর আবেদন করার ক্ষেত্রে তারা অযোগ্য হয়ে পড়েন।

৩. বয়সের ভিত্তিতে পয়েন্ট পাওয়ার জন্য যোগ্যতার অন্যান্য শর্ত

বয়সের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রোভিন্সিয়াল নোমিনেশন, এবং অন্যান্য দক্ষতা ভিত্তিক শর্ত পূরণ করাও জরুরি। অর্থাৎ শুধু বয়স ভালো হওয়াই যথেষ্ট নয়, অন্য শর্তও পূরণ করতে হবে।

যেমন, আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে নির্দিষ্ট স্তরের দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে (IELTS, PTE, TOEFL স্কোর), যথেষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, এবং আপনার পেশা (occupation) অস্ট্রেলিয়ার স্কিল্ড অকুপেশন লিস্টে (SOL বা MLTSSL) থাকতে হবে।

৪. বয়সের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার উপায়

যদি আপনি ৪৫ বছরের বেশি বয়সী হন, তবুও কিছু বিশেষ প্রোগ্রাম ও পদ্ধতির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় পিআর পাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে:

  • স্পন্সরশিপ বা প্রোভিন্সিয়াল নোমিনেশন প্রোগ্রাম (PNP): কিছু প্রোভিন্সে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য আলাদা সুবিধা বা বিধি থাকতে পারে। প্রোভিন্সিয়াল নোমিনেশন পেলে অতিরিক্ত ৫ পয়েন্ট পাওয়া যায় যা পয়েন্ট যোগফল বাড়াতে সাহায্য করে।

  • কর্মসংস্থান ভিত্তিক ভিসা: কিছু কর্মসংস্থান ভিত্তিক ভিসায় বয়সের জন্য শিথিলতা থাকে। যেমন Employer Nomination Scheme (Subclass 186) এর নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে কিছু ক্ষেত্রে বয়সের ছাড় পাওয়া যেতে পারে।

  • পরিবার স্পন্সরশিপ: পরিবারের সদস্যের স্পন্সরশিপে বয়সের শর্ত তুলনামূলক কম কঠোর হতে পারে।

  • Skill Assessment এবং বিশেষ পেশার সুযোগ: কিছু ক্ষেত্রে দক্ষতা যাচাই এবং বিশেষ পেশায় কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে বয়সের সীমা ছাড়িয়ে আবেদন করা যায়।

৫. বয়স কমানোর জন্য করণীয়

যদিও বয়স পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা উচিত। পয়েন্ট সিস্টেম অনুযায়ী বয়স কম হওয়া একটি বড় সুবিধা, তাই ৩০ এর বেশি বয়স হলে দেরি না করে এখনই পিআর প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। এছাড়াও:

  • আপনার ইংরেজি দক্ষতা উন্নত করুন, কারণ উচ্চ IELTS/PTE স্কোর অতিরিক্ত পয়েন্ট এনে দিতে পারে।

  • দক্ষতা যাচাই (Skill Assessment) সময়োপযোগী এবং সঠিকভাবে করুন।

  • প্রোভিন্সিয়াল নোমিনেশন বা Employer Nomination এর সুযোগ খোঁজ করুন।

  • আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করুন।

৬. বয়স ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

  • পয়েন্ট সিস্টেম নিয়মিত পরিবর্তিত হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন নীতি এবং পয়েন্ট সিস্টেম প্রতি বছর আপডেট হয়। তাই সর্বশেষ তথ্য জানার জন্য সরকারি ওয়েবসাইট (Department of Home Affairs) নিয়মিত চেক করা উচিত।

  • স্বাস্থ্য ও চরিত্র যাচাই: পিআর প্রক্রিয়ায় বয়সের পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সও আবশ্যক।

  • পরিবারিক সদস্যদের জন্য প্রভাব: পরিবারের সদস্যদের বয়স এবং তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী পয়েন্ট পাওয়া যায়, তাই পুরো পরিবারের অবস্থা বিবেচনা করা জরুরি।

৭. উপসংহার

অস্ট্রেলিয়ায় পিআর পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু একমাত্র নির্ধারক নয়। বয়সের সঠিক গ্রুপে থাকলে পয়েন্ট বেশি পাওয়া যায়, যা পিআর পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। তবে বয়স বাড়লেও সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশল ব্যবহার করে পিআর পাওয়া সম্ভব।

অতএব, বয়স কম থাকলে দ্রুত আবেদন শুরু করা উচিত, আর বয়স বেশি হলে প্রোভিন্সিয়াল নোমিনেশন বা স্পন্সরশিপের মতো বিকল্প পথগুলো খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি ইংরেজি দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা উন্নত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার অস্ট্রেলিয়ান পিআর যাত্রাকে সফল করতে হলে সর্বশেষ নিয়ম ও শর্তাবলী বুঝে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কনসালট্যান্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন যারা আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন।

যদি আপনি আরও বিস্তারিত জানতে চান অথবা আপনার পিআর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে চান, তাহলে আজই আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনাকে আপনার স্বপ্নের অস্ট্রেলিয়া পিআর যাত্রায় সহায়তা করব।

Facebook
X (Twitter)
YouTube
LinkedIn
Instagram